শুক্রবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » অপরাধ » দীর্ঘ ৪ বছর পর নারীখেকো মিঠুন মন্ডলের হাত থেকে মুক্তি পেল কিশোরী বিরোহিনী চাকমা
দীর্ঘ ৪ বছর পর নারীখেকো মিঠুন মন্ডলের হাত থেকে মুক্তি পেল কিশোরী বিরোহিনী চাকমা
নিজস্ব প্রতিবেদক :: রাঙামাটি শহরের দেষাশীষনগর এলাকার কার্পেন্টার মিস্ত্রি তারাপদ মন্ডলের একমাত্র ছেলে মিঠুন মন্ডল (৩৬) পেশায় কার্পেন্টার মিস্ত্রি নিজেকে মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় দেয় সে স্থানীয় সরকারি কলেজের ডিগ্রির ২য় বর্ষের ছাত্র।
জানাযায়, মিঠুন মন্ডলের সাথে মোবাইলের মাধ্যমে ২০১৭ সালে পরিচয় ঘটে রাঙামাটির বরকল উপজেলার ১৩৪নং আন্দার মানিক চেগেইয়া ছড়ি গ্রামের রুপায়ন চাকমা মেয়ে বিরোহিনী চাকমা (১২) তার পর মোবাইলে প্রেম করে জুন মাসে ২ জনই পালিয়ে চলে যায় মিঠুন মন্ডলের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর।
বিরোহিনী চাকমার পিতা মেয়ে নিখোঁজ এর মামলা করেন বরকল থানায় দেড়মাস পর খোঁজ নিয়ে রুপায়ন চাকমা জানতে পারেন তাদের মেয়ে মিঠুন মন্ডলের মদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে।
এ সংবাদ জানার পর বিরোহিনী চাকমার পিতা রুপায়ন চাকমা তার নিজের ২টি গরু বিক্রয় করে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বরকল উপজেলার প্রতিবেশী যুবকদের সহযোগিতায় রুপায়ন চাকমা মিঠুন মন্ডলের মদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে থেকে বিরোহিনী চাকমা (১২) কে উদ্ধার করে রাঙামাটিতে নিয়ে আসেন, মোবাইলের মাধ্যমে দেড়মাসের ভিতর বিরোহিনী চাকমা (১২) তার পিতা-মাতার অগোচরে আবারও মিঠুন মন্ডলের সাথে বিরোহিনী চাকমা তার গ্রামের বাড়ি বরকল উপজেলার ১৩৪নং আন্দার মানিক চেগেইয়া ছড়ি গ্রাম থেকে পালিয়ে রাঙামাটি শহরে মিঠুন মন্ডলের কাছে চলে আসে।
বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর বিরোহিনী চাকমা তার জন্মদাতা পিতা-মাতার অজান্তে বয়স প্রমানের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরী করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার নোটারী পাবলিক এর মাধ্যমে হলফনামা নং-১৯৪/১৮ তারিখ- ২৩/১২/২০১৮ বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন ধর্ম গ্রহন করে তার নাম বিরোহিনী মন্ডল বলে ঘোণনা দেয়। একই তারিখে নোটারী পাবলিক এর মাধ্যমে হলফনামা নং- ১৯৫/১৮ উভয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক বলে মিঠুন মন্ডল ও বিরোহিনী মন্ডল একে অপরকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বিবাহ সংক্রান্ত হলফনামা সম্পাদন করে।
এর পর মিঠুন মন্ডল তার স্ত্রী বিরোহিনী মন্ডলকে প্রায় সময়ে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন ভাবে মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন করায় বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকের মাধ্যমে বিরোহিনী মন্ডল বককল উপজেলার রাঙামাটিতে বসবাসকারী সমাজ সেবক জুঁই চাকমার কাছে সাহায্য চায়লে তিনি বিরোহিনী মন্ডল এর পিতা রুপায়ন চাকমা ও মাতা বুদ্ধ মালা চাকমার সাথে পরামর্শ করে বিরোহিনী মন্ডলের আইনগত সহায়তার জন্য ২৫ অক্টোবর-২০২২ তারিখ রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সহকারী জজ) এর নিকট গেলে তিনি ভিকটিমের মুখে বিস্তারিত জানার পর বিরোহিনী মন্ডলকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা জেলা কমিটি, রাঙামাটি এর নির্ধারিত আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির আবেদন পত্র পুরণ করার পরামর্শ দেন। বিরোহিনী মন্ডলের তার স্বামী মিঠুন মন্ডলের বিরুদ্ধে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩১/১০/২০২২ ইংরেজি তারিখ মীমাংসা সভার জন্য ধায্য করেন এবং প্রতিপক্ষ মিঠুন মন্ডলকে বিধি মোতাবেক নোটিশ, একই সাথে ফোন কল পেয়ে মিঠুন মন্ডল গড় হাজির থাকায় যৌতুকের দাবীতে মারধর, নির্যাতন ও গর্ভের সন্তান নষ্ট করায় বিরোহিনীর স্বামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুরুতর, প্রতিপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে মীমাংসা সভায় হাজির না হওয়ায় অভিযোগকারী বিরোহিনী মন্ডল ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি), রাঙামাটি এর প্রত্যয়নপত্র দাখিল করায় প্রতিপক্ষের (মিঠুন মন্ডল) বিরুদ্ধে ফেজদারী মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেয় এবং বিরোহিনী মন্ডলের পক্ষে মামলা পরিচালনার নিমিত্তে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেন।
অত্যান্ত গরিব পরিবারের কণ্যা বিরোহিনী মন্ডলের পিতা রুপায়ন চাকমা ও মাতা বুদ্ধ মালা চাকমা তাদের মেয়ের লেখা-পড়া এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করেয়া তারা উভয়ে বিরোহিনী মন্ডলের আইনগত অভিভাবক এর ক্ষমতা সমাজ সেবক জুঁই চাকমার নিকট হস্তান্তর করেন যাহার হলফনামা নং- ১০/২০২২ তারিখ- ০৬/১১/২০২২ ইংরেজি।
ইতোমধ্যে চতুর মিঠুন মন্ডল তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে বিষয়টি জানার পর সে স্বেচ্ছায় রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সহকারী জজ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে পূর্ণরায় নিজে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির আবেদন পত্র পুরণ করে রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. জুনাইদ (সহকারী জজ) মিঠুন মন্ডল ও বিরোহিনী মন্ডল তাদের পারিবারিক সমস্যা বিষয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে আপোষ-মীমাংসার উদ্দেশ্য ২২/১১/২০২২ ইংরেজি তারিখে মীমাংসা সভার মাধ্যমে পরস্পর স্বামী-স্ত্রী পক্ষগণ পারিবারিক বিরোধ আপোষে নিন্মলিখিত শর্তে বিবাহ বি্েছদের মাধ্যমে নিস্পতি করেন।
রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত চুক্তি, এডিআর নং-৮৭৩/২০২২, তারিখ- ২২/১১/২০২২ ইংরেজি মূলে শর্তসমুহ : ১। পক্ষগণ পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। পরিবারিক বিরোধে পক্ষগণ আপেষে বিবাহ বিচ্ছেদদের সিদ্ধান্ত গ্রহন করিলেন। ২। অদ্য (২২/১১/২০২২) হতে তারা পৃথক পৃথক করে বসবাস করবেন। মিঠুন মন্ডলের দখলে থাকা বসতবাড়ী খাস জমিসহ বসতবাড়ী (এক শতক) জায়গা তার স্ত্রী বিরোহীনি মন্ডলকে তার ভরনপোষনের খরচ বাবদ এক কালীন দান কবলা করে দিবেন। ৩। ১মপক্ষ উক্ত জায়গা দিতে গরিমসি করলে কিংবা না দিলে তা ২য়পক্ষ আইনগত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে ১মপক্ষের কোন আপত্তি থাকিবেনা। ৪। পক্ষগণ একে অপরের বিরুদ্ধে কোন প্রকার কুৎসা রটনা করিবেনা। হয়রানিমুলক কার্যকলাপ করিবেনা। ৫। পক্ষগণ আপোষনামার শর্তাবলী মেনে চলিবেন। কোনপক্ষ শর্তসমূহ লংঘন করিলে অপরপক্ষ অত্র অফিসে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।
আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ এর ২১ (ক) ধারার ক্ষমতাবলে এবং আইনগত সহায়তা প্রদান আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা, ২০১৫ এর ১৬ ধারার বিধান ক্ষমতাবলে অত্র মিমাংসা করা হল, যা একটি বৈধ আইনগত দলিল।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, জুনিয়ার হাই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী জন্ম নিবন্ধন নং : ২০০৫৮৪১২১৭৯১০৩০২২ বিরোহিনী চাকমা (১২) বর্তমান বিরোহিনী মন্ডল এর মিঠুন মন্ডল তার নিজের পরিচয় গোপন রেখে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এ পর্যন্ত আরো ৮জন কিশেীর জীবন নষ্ট করিয়াছে। মিঠুন মন্ডলের খপ্পড়ে পড়া এসকল নারীরা ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সকলেই চাকমা জনগোষ্ঠীর কিশোরী।
দীর্ঘ ৪ বছর পর রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের আইনগত সহায়তায় নারীখেকো মিঠুন মন্ডলের হাত থেকে মুক্তি পেল কিশোরী বিরোহিনী চাকমা।
মিঠুন মন্ডল নিজে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফাঁদ পেতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চাকমা কিশোরীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাঙামাটি শহরে কিছুদিন রেখে নিজে কিশোরীদের দেহভোগ করে দেশের বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রয় করে দেয় স্থানীয়দের ধারনা। মিঠুন মন্ডলের সহায়তাকরী হিসেবে কয়েকজন ও একজন আইনজীবী রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।