সোমবার ● ১৫ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » মোরেলগঞ্জে কালের স্বাক্ষি দেড়শ’ বছরের জমিদার বাড়ি বেদখল
মোরেলগঞ্জে কালের স্বাক্ষি দেড়শ’ বছরের জমিদার বাড়ি বেদখল
এস এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: ব্রিটিশ শাসন আমলের জমিদারি শাসন ব্যবস্থা আজ শুধুই স্মৃতি। কালের স্বাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই সময়ে দু’একটি বসতবড়ি। এক সময়ের ৬শ’ একর বা ১৮শ’ বিঘা জমির মালিকের তৃতীয় প্রজন্ম এখন মাত্র ৩ একর বা ৯ বিঘা জমির মালিক।
পূর্ব পুরুষদের সেই সব জমি প্রায়ই বেদখল হয়ে গেছে। আবার খাজনা পরিশোধ না হওয়ার কারণে সরকার করে নিয়েছে খাস। শনিরজোর গ্রামের সেই প্রসন্ন রায়ের বাড়িটি আজও জমিদার বাড়ি নামেই পরিচিত। সময়ের পরিবর্তনে সেই জমিদারের প্রজন্মদের কেউ খোঁজ রাখেন না। জীবন সংগ্রামে কোন মতে বেঁচে আছেন তারা। জমিদার ঠাকুর দাদার ৪ বিঘা বসতবাড়ির ওপরে নির্মিত দেড়শ’ বছরের পুরাতন ভবন জমিদার রায় বাড়ি এখন শুধু স্মৃতি। কালের বিবর্তে এখন আর জমিদার বাড়ির সামনে থেকে ছাতা বন্ধ, আর কাউকে জুতা খুলে নতজানু হয়ে পথ চলতে হয় না।
সরেজমিনে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের শনিরজোর গ্রামের ‘রায়বাড়ি’ জমিদার প্রসন্ন রায় ১৮শ’ বিঘা জমির মালিক হয়ে দেড়শ’ বছর পূর্বে তৎতকালীন প্রজাদের নিয়ে তার জমিদারি প্রথা শাসন ব্যবস্থা ছিলো। তার মৃত্যুর পরে স্ত্রী ললিতা সুন্দরী এ স্টেট পরিচালনা করতেন। তিনিও বেঁচে নেই। জমিদার প্রসন্ন রায়ের ৪ ছেলে, ২ মেয়ে। ছেলেরা হলেন দিজেন্দ্র লাল রায়, শুধাংশু রায়, মনোরঞ্জন রায় ও খিতিশ রায়। তারাও ৫০/৬০ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন ওই বাড়িতে ৪ ছেলের নাতিরা বসবাস করছেন। মনোরঞ্জন রায়ের ছেলে প্রকাশ রায় (৭২), বিধান রায়ের ছেলে মিল্টন রায় (৩০) জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (সরকারিভাবে ভাতা পাচ্ছেন), খিতিশ রায়ের ছেলে বাবলু রায় (৭৫) তিনিও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ৮ বছর ধরে বিছানায় অসুস্থ অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। তিনি বয়স্ক ভাতার আওতায় আসেননি।
বৃদ্ধ প্রকাশ রায় লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে বলেন, এক সময়ে বাপদাদারা দু’হাত ভরে প্রজাদের দান করতেন। আজ আমরা দু’মুঠো ভাতের জন্য পারছি না কাউকে বলতে। একদিকে শত শত বিঘা জমি নিলাম করে নিয়েছে অন্যদিকে প্রভাবশালীরা দখল করেছে তাদের অনেক জমি। থাকার শুধুমাত্র এই দাদার স্মৃতি জরাজীর্ণ ভবনটি। তার পরেও সুখের নিঃস্বাস নিয়ে বাস করছি। আমাদের কেউ খোঁজ রাখেন না। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায়দের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়। আমাদের সব কিছু থেকেও এখন শূন্য। তাই, সরকারি উদ্যোগে তাদের পূর্ব পুরুষদের জমিদারের স্মৃতি এ রায় বাড়িটি সংস্কারের দাবি জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম তারেক সুলতান বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য পুরাতন স্মৃতির খোঁজ খবর নিয়ে তালিকা করে পাঠানোর জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করবেন।