সোমবার ● ৩১ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » এগিয়ে যাও বাংলাদেশ » সাত বছর ধরে আদালতে চলমান মামলা রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে সাতদিনে সফল মীমাংসা
সাত বছর ধরে আদালতে চলমান মামলা রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে সাতদিনে সফল মীমাংসা
স্টাফ রিপোর্টার :: সিভিল কোর্টে সাত বছর ধরে বিচারাধীন মামলা জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আপোষে মীমাংসা করে নগদে ১৩ লাখ টাকা আদায়।
সময় লেগেছে সর্বোচ্চ সাত দিন, খরচ শূন্য টাকা।
বাদীগনের পক্ষে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার বরাবর বিকল্প বিরোধ এর মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন ও বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ রাঙামাটি আদালতের সিভিল’ মামলা নং- ৬৬৯/২০১৬ ইংরেজি সূত্রে জানাযায়, ১৯৮২ ইংরেজি সনের পূর্বে রিজার্ভ বাজার এলাকায় অবস্থিত নিউ রাঙামাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জরাজিন্ন অবস্থা থাকায় এবং তৎকালীন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্কুল উন্নয়নের জন্য তেমন কোন বরাদ্দ না থাকায় মামলার বাদীগন সম্পূর্ণ নিজ খরচে বিদ্যালয় রক্ষার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে একটি ধারক ওয়াল নির্মাণ করে। তাছাড়াও মামলার বাদীগন বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেন ।
২। ২৩/১০/১৯৮২ ইংরেজি সনে নিউ রাঙামাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নতিকল্পে এক সাধারন সভায় তৎকালিন মহাকুমা প্রশাসক সদর ও সভাপতি স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আব্দুল হাই রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৮/১২/১৯৯৪ ইংরেজি সনে তৎকালীন স্কুল, পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিরুপা দেওয়ান এর সহিত বাদীগনের সহিত পৃথক পৃথকভাবে দোকান ভাড়ার চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক ১ থেকে ৬নং বাদীগনের নিকট হতে জনপ্রতি ১৬ হাজার টাকা এবং এনং বাদী হতে ২২ হাজার টাকা সেলামী হিসাবে গ্রহন করে দোকান বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
৩। ইতিপূর্বে দোকানঘর পরিত্যাক্ত জায়গা হিসেবে থাকলেও বাদীগণ নিজস্ব অর্থায়নে তা সংস্কার করি এবং ১৯৮২ ইংরেজি সন হতে ১৯৯৪ ইংরেজি সন পর্যন্ত খালি জায়গার ভাড়া প্রদান করি এবং নিজস্ব অর্থায়নে দোকানঘর নির্মাণ করেন। ১৯৮২ ইংরেজি হতে ২০২০ ইংরেজিপর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর পর্যন্ত দোকানঘরটির সংস্কার বাদীগণের নিজস্ব অর্থায়নে করেন। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ভাড়া গ্রহণ করলেও দোকানঘরটি সংস্কারের জন্য এক টাকার অর্থও ব্যয় করেননি।
৪। বাদীগন দোকান ঘর চুক্তির কোন শর্ত ভঙ্গ না করার সত্তেও বিগত ০২/০৮/২০১৬ ইংরেজি তারিখে স্কুল কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষক পারভীন ফেরদৌসী কর্তৃক বাদীগনকে দোকান ঘর গুলো অপসারনের চিঠির প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ-যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিভিল মামলা নং- ৬৬৯/২০১৬ দায়ের করেন।
৫। মামলা চলাকালীন সময়ে বিগত ০৭/১০/২০২০ ইংরেজি তারিখে দিবাগত রাতে আকস্মিক অগ্নিকান্ডে বাদীগনের ০৫টি দোকান সম্পুর্ণ পুড়ে যায়। যাতে বাদীগনের প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইতিমধ্যে স্কুল পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি, মুছা মাতব্বর, সহ-সভাপতি, মনিরুজ্জমান মহসি রানা, প্রধান শিক্ষক, পারভিন ফেরদৌসী, হেডম্যান প্রতিনিধি, মো. হারুন সহ স্কুল পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যগনসহ বাদীগনের সহিত এক যৌথ জরুরী সভার অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাড়াটিয়াদের দোকানের স্থানে ১টি ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। প্রাথমিকভাবে ভবনের ২য় তলা পর্যন্ত তৈরির জন্য ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে মর্মে স্কুল কমিটি বাজেট প্রস্তাব করে। যার সম্পুর্ণ ব্যয়ভার ভাড়াটিয়াদের থেকে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে ভাড়াটিগনকে ১টি করে দোকান প্লট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সেই মোতাবেক প্রত্যেক ভাড়াটিয়া থেকে জনপ্রতি ৫ লক্ষ টাকা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সেই মোতাবেক আমরা বাদীগন ১ম কিস্তি হিসাবে বিগত ২৫/১১/২০২০ ইংরেজি তারিখে জনপ্রতি ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরুরী ভিত্তিতে ঋন গ্রহন করে স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে “নিউ রাঙামাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঞ্চয়ী একাউন্ট নং- ০৭৫৬১০১৩৩০৬৫ এ টাকা জমা করেন বাদীগণ। ইতিমধ্যে দোকান পুড়ে যাওয়ার সত্তেও বাদীরা ডিসেম্বর ২০২০ ইংরেজি পর্যন্ত দোকান ভাড়াও সম্পুর্ণরুপে পরিশোধ করিয়াছেন।
৬। বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিভিল মামলা নং- ৬৬৯/২০১৬ চলাকালীন সময়ে ২২/০৫/২০১৩ ইংরেজি তারিখে আকষ্মিকভাবে বাদীদের অবগত না করে বিরোধীয় জমির কিছু অংশে জোরপূর্বক ধারক ওয়াল নির্মান করে এবং ২০/০৬/২০২৩ ইংরেজি তারিখে ইতিপূর্বে অগ্নিকান্ড থেকে বেচে যাওয়া ২টি দোকান (এ কে এম মকছুদ আহমদ ও বিজয় দত্ত এর ভোগদখলরত) আনুমানিক রাত দেড় ঘটিকায় জোর-জুলুম করে আদালতকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ সম্পুর্ণ ভেঙ্গে দেয়। এতে বাদীগণের প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়।
৭। বিগত ১৮/১২/১৯৯৪ ইংরেজি সনে বাদীগণের নিকট জনপ্রতি ১৬ হাজার টাকা এবং ৭নং বাদী হইতে ২৪ হাজার টাকা সেলামীর টাকা এবং বিগত ২৫/১১/২০২০ ইংরেজি তারিখে স্কুলের একাউন্টে জমা প্রদানকৃত জনপ্রতি ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সম্পুর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে বাদীগণকে টাকা প্রদান না করে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রহস্থ করেছেন। বাদীগণের দোকান-পাট ভাংচুর করেছেন। বাদীরা বহু কষ্টে ধার-দেনা করে টাকা পরিশোধ করেছেন। বাদীরা সকলে ঋনগ্রস্ত হয়েছে।
৮। বিগত ২৫/১১/২০২০ইংরেজি তারিখে বাদীদের প্রত্যেকের ঋণকৃত জনপ্রতি ২ লক্ষ ৫০ হাজার নিউ রাঙামাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঞ্চয়ী একাউন্ট নং- ০৭৫৬১০১৩৩০৬৫ জমা থাকলেও বাদীদের টাকার লভ্যাংশ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত গ্রহণ করছেন এবং বাদীগণকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাদীদের ৭ টি দোকান স্কুল নির্মানের জন্য উচ্ছেদের কথা বললেও সেলিম নামক একজন ভাগটিয়ার সহিত আলাদা ১ টি চুক্তি করে ১ টি দোকান এখনো সম্পূর্ণ অক্ষত রেখেছে। এতে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য প্রমানিত হয়। যা সরেজমিনে তদন্ত করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
বাদীরা বিভিন্ন সময়ে স্কুলের স্বার্থের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে বাদীদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমান আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অগ্নিকান্ডে এবং বাদীদের দোকান ভেঙ্গে দেওয়ায় এবং বাদীরা ঋণের টাকার আর্থিক ক্ষতির বিহিত ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করেন।
রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আপোষে মীমাংসা সভার মাধ্যমে তাদের ১৩ লাখ টাকা আদায় হওয়াতে বাদীগণ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনায়েদ গত সাত বছর ধরে আদালতে চলা মামলা সাত দিনে মীমাংসা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, নিউ রাঙামাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা নিয়ে ২০১৬ সন থেকে চলমান বিরোধটি সিভিল কোর্ট থেকে রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠালে গত ১৭ জুলাই-২০২৩ সোমবার সরেজমিন মীমাংসা সভা করে সফল মীমাংসা করা হয়।
নিউ রাঙামাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদীগণের পাওনা নগদে ১৩ লাখ টাকা রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে জমা দেন। রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিস বাদীগণের ১৩ লাখ টাকা নগদে বুঝিয়ে দেয় বলে জানান লিগ্যাল এইড অফিসার রাঙামাটি ।