সোমবার ● ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ
বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলিতে সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী (নব্যমুখোশ) কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য নিপন চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার সময় ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা বঙ্গলতলী এলাকায় ইউপিডিএফ সদস্য নিপন চাকমাকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করে।
আজ সকাল ১০টার সময়ে ইউপিডিএফের দলীয় পতাকায় আবৃত শহীদ নিপন চাকমার মরদেহ ভর্তি কফিন নিয়ে বঙ্গলতলি নুয়ো দোকান থেকে গণবিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি এলাকার রাস্তা প্রদক্ষিণ করে বটতলা নামক স্থানে গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, নিপন চাকমা মরলো কেন-প্রশাসনের জবাব চাই, গুলি করে আন্দোলন-বন্ধ করা যাবে না, আমাদের সংগ্রাম চলছে-চলবে’ ইত্যাদি শ্লোগান দেন।
সমাবেশে সোহেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি বিরো চাকমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা বলেন, গতকাল বঙ্গলতলীতে সেনা-সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ-রাজাকাররা নিপন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই যে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলছে এসব ঘটনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মদদেই সংঘটিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গতকাল নিপন চাকমাকে হত্যার পর সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সামনে দিয়ে পালিয়ে গেছে। কাজেই এ হত্যাকাণ্ডের দায় সেনাবাহিনীকেই নিতে হবে।
আর্জেন্ট চাকমা বলেন, নিপন চাকমা জনগণের স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই জনগণকেই তার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার সমতলে এক শাসন আর পার্বত্য চট্টগ্রামে আরেক শাসন চালাচ্ছে। পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন জাারি রেখে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে খুন, গুম, অপহরণসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আর এসব অন্যায়-অবিচার বরদাস্ত করবে না।
তিনি ঠাঙাড়েদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীর ভাড়াটে হয়ে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে তার জন্য একদিন জনগণের কাছে কড়ায় গন্ডায় হিসাব দিতে হবে।
তিনি অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
যুব নেতা বিরো চাকমা বলেন, পাহাড়িরা আজ শাসকগোষ্ঠির ষড়যন্ত্রের শিকার। গতকাল বঙ্গলতলীতে সহযোদ্ধা নিপন চাকমাকে হত্যা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
তিন মাসের মাধ্যে অনেক সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার সময় রাতের আঁধারে নব্যমুখোশ-রাজাকার সন্ত্রাসীরা সহযোদ্ধা নিপন চাকমাকে কাপুরুষের মতো গুলি করে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেন, নিপন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার আদায়, অস্তিত্ব রক্ষা, ভূমি ও মা-বোনের ইজ্জত রক্ষার্থে লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি একজন বীর শহীদ। নিজেকে আত্মবলিদান দেয়ার মাধ্যমে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।
তিনি ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ-রাজাকারদের জাতির কুলাঙ্গার উল্লেখ করে তাদের প্রতিহত করতে শপথ নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ চলাকালে বাঘাইহাট সেনা জোন ও করেঙাতলী ক্যাম্প থেকে তিনটি গাড়িতে করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হলে বিক্ষুব্ধ জনতা নানা শ্লোগান দেয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে চলে যায়।
এ সময় বাঘাইছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর দোস্ত মোহাম্মদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ কর্মকর্তা দোস্ত মোহাম্মদ উপস্থিত লোকজনের সাথে লাশের ময়নাতদন্ত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কথা বলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন।
পরে ময়নাতদন্তের জন্য নিপন চাকমার মরদেহ পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সড়ক অবরোধ:
অপরদিকে, উক্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইউপিডিএফ আজ সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাঘাইছড়ি উপজেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
উপজেলার বঙ্গলতলী, সাজেকসহ বিভিন্ন এলাকায় ইউপিডিএফের বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছে গুলি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে সড়কে যার চলাচল বন্ধ ছিল।
গণবিক্ষোভ ও আধাবেলা সড়ক অবরোধ সফল করায় ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক অক্ষয় চাকমা এলাকার জনসাধারণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
লামায় ভূমি বেদখলের নিন্দা
বান্দরবানে লামায় অশোক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ চাইন্দিমা ভিক্ষুকে হেনস্তা এবং অবৈধভাবে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি বেদখল প্রচেষ্টার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার ইউপিডিএফের সহসভাপতি নতুন কুমার চাকমা এক বিবৃতিতে বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রোজ শুক্রবার সকাল ১১ টায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির লোকজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রেংয়েন পাড়ায় যায় এবং বিহারে প্রবেশ করে আহাররত ভান্তেকে হেনস্তা ও তার পরিহিত রংবস্ত্র ধরে টেনেহেঁচড়ে বিহার থেকে নামানোর চেষ্টা করে। এ সময় তারা রেংয়েন কার্বারীকেও মারধর করে।
কোম্পানির লোকজন এরপর পাড়ায় গিয়ে ম্রোদেরকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে এবং চলে না গেলে তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার হুমকি দেয়।
ইউপিডিএফ নেতা রেংয়ুন কার্বারীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজন গত ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি তাদের ৪০০ একর জমি বেদখলের উদ্দেশ্যে জঙ্গল কেটে সাফ করে; এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে প্রতিবাদ জানানো হলেও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
নতুন কুমার চাকমা অবিলম্বে ম্রোদের বংশপরম্পরায় ভোগদখল করে আসা জমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ, ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং উ চাইন্দিমা ভিক্ষুকে হেনস্তা ও ধর্মীয় অবমাননার সাথে জড়িত লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজনকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার নিন্দা
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলীতে গতকাল শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) রাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে (নব্যমুখোশ) সন্ত্রাসীরা নিপন চাকমা (৩৫) নামে ইউপিডিএফের এক সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে।
নিহত নিপন চাকমা বাঘাইছড়ির পশ্চিম বালুখালী গ্রামের কমলা কান্তি চাকমার ছেলে।
ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক অক্ষয় চাকমা আজ রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৯ টার সময় একদল সশস্ত্র ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলযোগে বঙ্গলতলীতে এসে ইউপিডিএফ সদস্য নিপন চাকমার ওপর গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।
বিবৃতিতে তিনি উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করলেও খুনিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি খুনি-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রেখে খুন-খারাবিতে লেলিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রাখতে শাসকগোষ্ঠি মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানান।