বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় নয়দফা দাবি : উত্তাল ক্যাম্পাস
চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় নয়দফা দাবি : উত্তাল ক্যাম্পাস
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: চট্টগ্রাম প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েট ক্যাম্পাস থেকে দুই শিক্ষার্থী মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়ে কাপ্তাই সড়কের যাত্রীবাহী বাস শাহ আমানত পরিবহনের ধাক্কায় নিহত হয়। এই ঘটনা ঘটে ২২ এপ্রিল সোমবার বিকাল ৩টার দিকে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীরা হচ্ছে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসেন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছে চুয়েটের ইইই বিভাগের মো. জাকারিয়া হাসান হিমু। নিহত শান্ত সাহা গ্রামের বাড়ি নরসিংদী উপজেলার নরসিংদী সদরের ৪নম্বর ওর্য়াডের কাজল সাহা ছেলে। তৌফিক হোসেনের বাড়ি নোয়াখালীর নিউ কলেজ রোডের সুধারাম ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। এই দুর্ঘটনার সংবাদ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে চুয়েট সামনের সড়ক অবরোধ করে। বিকালে তিনটি যাত্রীবাহী বাস সড়ক থেকে ধরে ক্যাম্পাসের ভিতর নিয়ে যায়। সড়কের পাশে ব্যারিকেট দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা।
এসময় দুই পাশে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়ে। রাত আটটার দিকে ক্যাম্পাস থেকে একটি বাস বের করে কাপ্তাই সড়কের উপর এনে প্রথমে ভাংচুর। পরে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেয়ার সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের বিরত রাখার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া শ্লোগান দিয়ে পুলিশকে পিছুহঠিয়ে দেয়।
এদিকে ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে নতুন করে আবারও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাস জুড়ে। সকাল ৯টার দিকে কাপ্তাই সড়কে গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীরা যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এসময় দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। দুপুর ১২.৪০ মিনিটে কাপ্তাই সড়কে নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাযা পড়েন। জানাযা নামাজের অংশগ্রহণ করেন চুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দীন আহাম্মদসহ চুয়েটের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা নয়দফা দাবি ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থীরা চুয়েটের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক সুমন দের পদত্যাগ দাবি করেন। নয়দফা দাবি তুলে ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, পলাতক শাহ আমানত বাসের চালক ও হেলপারকে দ্রুত আটক করে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। কাপ্তাই সড়কে এবি ট্রাভেলস ও শাহ আমানত বাস সার্ভিস চলাচল নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বলেন, কাপ্তাই সড়কে বাস-সিএনজি বেপরোয়া ভাবে চালিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। আমরা একটি নিরাপদ সড়ক চাই, আজকে দুইজন মেধাবী শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সড়কে আর কোনো মানুষের মৃত্যু যাতে না হয়। ঘটনার দিন সোমবার রাত সাড়ে ৯টার পর সড়কে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পসে অবস্থান করেন। রাত নয়টার দিকে রাঙ্গুনিয়া থানা থেকে ২টি ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে গাড়ীর আগুন নিভায়। রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেট তুলে নিলে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
তবে মঙ্গলবার সকালে থেকে আবারও আন্দোলন শুরু হলে কাপ্তাই সড়কে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। ক্যাম্পাসের ভিতরে থাকা শাহ আমানত পরিবহনের আরও ২টি গাড়ি ভাংচুর করেন শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ বিকাল ৪টায় শিক্ষার্থীরা জানান তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। সকল প্রকার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৩টায় চুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চত্তরে চুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম ও রাউজানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগজ্যাই মারমা শিক্ষার্থীদের দাবি গুলো দ্রুত বাস্তব করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে চুয়েটের উপপরিচালক (জনসংযোগ) ফজলুর রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২৪ এপ্রিল বুধবার তৃতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।