
বৃহস্পতিবার ● ১০ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » এগিয়ে যাও বাংলাদেশ » কাপ্তাইয়ে বিষু উৎসব’কে ঘিরে কোমর তাঁতে কাপড় বুনছেন তনচংগ্যা সম্প্রদায় নারীরা
কাপ্তাইয়ে বিষু উৎসব’কে ঘিরে কোমর তাঁতে কাপড় বুনছেন তনচংগ্যা সম্প্রদায় নারীরা
এম বাবুল,কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি :: আসন্ন পার্বত্য জেলা রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী বিষু উৎসবকে সামনে রেখে কোমর তাঁতে কাপড় বুনছেন তনচংগ্যা সম্প্রদায় নারীরা। কেউ সুতা প্রস্তুত করছেন, কেউ আবার করছেন রং। অন্যরা ব্যস্ত সময় পার করছে কোমর তাঁত তৈরিতে। কাঠ ও বাশেঁর তৈরি সরঞ্জামাদি দিয়ে এই তাঁত তৈরী করা হয় । এ তাঁতে চলছে বাহারি ডিজাইনের আকর্ষণীয় পিনোন হাদি তৈরির কাজ। বলছি, রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ওয়াগ্গা ইউনিয়ন সাপছড়ি পাড়ার কথা। ওই পাড়ায় প্রায় ২’শ নারী ও তরুণী কোমর তাঁতে পিনোন হাদি তৈরিতে পারদর্শী। বিষু উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কাপ্তাই সাপছড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ১২ এপ্রিল তনচংগ্যা সম্প্রদায়ের পোশাক পরে নারীরা দলবদ্ধ হয়ে কর্ণফুলী নদীতে ফুল ভাসিয়ে ফুলবিষু উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবে।
এ মেলায় পিনোন হাদি অর্থাৎ তনচংগ্যা সম্প্রদায়ে পরিধানের বিশেষ বস্ত্র বিশেষ গুরুত্ব পায়। তনচংগ্যা রমণীদের নিজস্ব ৫ টি জুম্ম পোশাক আছে সেগুলো হলো মাধা খবং, জুম্ম সালুম, খাদি বা হাদি, ফারদুরি বা ফাদুরি পিনুইন বা পিনুন।
তাই মেলা আর নিজেদের সামাজিক উৎসব বিষুকে ঘিরে পিনোন হাদি তৈরিতে সময় পার করছেন তনচংগ্যা সম্প্রদায় নারীরা। কোমর তাঁতে তৈরি এ হাদি বিক্রি করে অনেকের সংসার চলে বলে জানান সাপছড়ি পাড়ার স্বপ্না তনচংগ্যা। তিনি আরও বলেন, উৎসব এলে চাহিদা বাড়ে পিনোন হাদির। তনচংগ্যা সম্প্রদায়ে বিষু উৎসবে পিনোন হাদি পরিধান করতে বেশি পছন্দ করে।
তাই বেচা বিক্রিও বেশি হয়। এবার বিষুকে ঘিরে আগে থেকে পিনোন হাদি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ি নারীরা।
শুধু একজোড়া পিনোন হাদি বিক্রি হয় ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত, বলছেন- একই এলাকার সুমি তনচংগ্যা। তিনি বলেন, বাজারে কাঁচামালের সংকট, কোরিয়ান ও রেয়ন সুতার দাম ও এখন বেশি তাই সুতা, নকশা আর কাজ মিলে একটি পিনোন হাদি তৈরিতে অনেক খরচ পড়ে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। টানা কাজ করলে একজোড়া পিনোন হাদি তৈরি করতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। সঠিক পারিশ্রমিক না পেলে পিনোন হাদি তৈরিতে আগ্রহ হারাবে পাহাড়ি তনচংগ্যা সম্প্রদায় নারীরা।
এ বিষয়ে মিনতি তনচংগ্যা বলেন, আমরা একটা পিনন কাপড় বুনলে সাত হাজার টাকা পায় কিন্তু আমাদের বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। সেই তুলনায় আমাদের মজুরি অনেক কম হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ তনচংগ্যা কল্যাণ সংস্থার কাপ্তাই অঞ্চল কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয়
অর্থ সম্পাদক অজিত কুমার তনচংগ্যা বলেন, আদিকাল থেকেই কোমর তাঁতে কাপড় বুনে আসছে। বিশেষ করে আমাদের বিষু উৎসব উপলক্ষে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কাপড় নারীরা পরিধান করে। তিনি আরও বলেন, বেকার তনচংগ্যা নারীরা ঘরে ঘরে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলেছেন। তাদের কোমর তাঁতে তৈরি এ পিনোন হাদি এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তাদের এ কর্মসংস্থানের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে।