
শনিবার ● ১২ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ❝বিঝু (Bizu)❞ চাকমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব
❝বিঝু (Bizu)❞ চাকমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব
চাকমা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে পরিচিত “বিঝু”। যদিও জনগোষ্ঠী বা উপ-সম্প্রদায় ভেদে উৎসবটির নাম কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে, তবুও চাকমা জনগোষ্ঠীর কাছে এটি ‘বিঝু’ নামেই অধিক পরিচিত।
এই উৎসবটি প্রতিবছর ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল উদযাপিত হয়ে থাকে তিনটি ধাপে:
ফুল বিঝু, মূল বিঝু ও গোজ্জেপোজ্জে (নববর্ষ)।
১২ এপ্রিল : ফুল বিঝু
ফুল বিঝু মূলত শুরু হয় ১১ তারিখ রাত ১২টা থেকে। তখন শিশু-কিশোররা দল বেঁধে ফুল সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ে।
সকালে সংগৃহীত ফুলগুলো দিয়ে বুদ্ধ পূজার জন্য কিছু আলাদা করে রাখা হয়। বাকি ফুল দিয়ে ঘরদোর, বাড়ির আঙিনা সাজানো হয়।
কিছু ফুল কলা পাতায় সাজিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে পুরোনো বছরের দুঃখ-দুর্দশা ভেসে যায় এবং নতুন বছর নিয়ে আসুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি—এই প্রার্থনা করা হয় জলের দেবীর উদ্দেশ্যে।
এছাড়া কিছু ফুল দিয়ে গৃহপালিত পশু-পাখিকে সাজানো হয়।
এরপর সবাই নদীতে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করে, স্নান শেষে পাড়ার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কিশোর-কিশোরীরা কলসি নিয়ে গোসল করিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করে।
এই ভাবেই পালিত হয় চাকমা সংস্কৃতির অন্যতম পবিত্র পর্ব ফুল বিঝু।
১৩ এপ্রিল : মূল বিঝু
এই দিনটি আনন্দ, উৎসব, নাচ-গান আর ভোজের দিন।
সকালে মা-বোনেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন রান্নার প্রস্তুতিতে।
মূল আকর্ষণ থাকে “পাজোন তোন” নামের ঐতিহ্যবাহী সবজি নির্ভর তরকারিতে।
এই পদটি তৈরি হয় প্রায় ৩২-৩৩ ধরনের সবজি একত্রে রান্না করে।
শিশুরা সকাল সকাল গোসল সেরে নতুন পোশাক পরে বেড়িয়ে পড়ে “বিঝু খাওয়ার” আনন্দে।
বাচ্চাদের গোসল করাতে উৎসাহ দিতে বলা হয়—
”বিঝুগুলো বো হন্না হন্না হেব গোই, হেলে এজ ছড়াত যেই।”
অর্থাৎ, বিঝুর খাবার কে কে খাবে, খেতে হলে আগে গোসল সেরে চলো।
১৪ এপ্রিল : গোজ্জেপোজ্জে (বাংলা নববর্ষ)
এই দিনটি বাংলা বছরের প্রথম দিন, যেটিকে চাকমা জনগোষ্ঠী গোজ্জেপোজ্জে নামে অভিহিত করে।
সকাল বেলায় সবাই বিহারে গিয়ে বুদ্ধ পূজা, পিণ্ডদান এবং ভান্তেদের দেশনা শ্রবণ করেন।
পূণ্যানুষ্ঠান শেষে সবাই ঘরে ফিরে আসে এবং রান্নাবান্না করে আবারও উৎসবের আমেজে নাচে-গানে দিনটি উদযাপন করেন।
এইভাবেই ফুল বিঝু, মূল বিঝু এবং গোজ্জেপোজ্জে—এই তিন পর্বে চাকমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু উদযাপিত হয়।
এটি কেবল একটি উৎসব নয়, বরং এক সামাজিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ।
সবাইকে বিঝুর শুভেচ্ছা,
Happy Phool Bizu!
প্রিয়তোষ চাকমা