বুধবার ● ৯ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপির প্রস্তুতি সভা
বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপির প্রস্তুতি সভা
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেট আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষে সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার লামাকাজী ও রামপাশা ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে পৃথক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ৮ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের লামার বাজারে ও রামপাশা ইউনিয়নের বৈরাগীবাজারে পৃথক প্রস্তুতি সভা দুটি অনুষ্ঠিত হয়।
পৃথক প্রস্তুতি সভাগুলোতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌছ আলী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক প্রভাষক মোনায়েম খান, যুগ্ম সম্পাদক কাওছার খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুরমান খান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক তালুকদার গিয়াস উদ্দিন, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কাওছার আহমদ তুলাই, সদস্য জসিম উদ্দিন জুনেদ, খসরুজ্জামান খসরু, দৌলতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আরব খান, উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক ইরন মিয়া মেম্বার, সদস্য আয়াজ আলী, উপজেলা যুবদলের নেতা সিহাব উদ্দিন, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক আশিকুর রহমান রানা, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সালম জুনেদ, আব্দুল কাইয়ুম।
লামাকাজী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হকের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবেদুর রহমান আছকিরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখেন লামাকাজী ইউনিয়ন যুবদল নেতা আলী হোসেন, লামাকাজী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জুবায়ের আহমদ। সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন যুবদল নেতা আব্দুল হক।
রামপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনিসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখেন রামপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, বিএনপি নেতা সিরাজ উদ্দিন, আব্দুল জলিল, জয়নাল আহমদ মোল্লা, রামপাশা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ইসলাম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ছুনু মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদল নেতা নাজমুল ইসলাম শিমুল, তোফায়েল আহমেদ। সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন যুবদল নেতা আফিজ আলী।
সভাগুলোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কদর আলী, শামীম আহমদ মেম্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন মামুন মেম্বার, দপ্তর সম্পাদক আমির উদ্দিন, যুব বিষয়ক সম্পাদক নূরুল মিয়া, পৌর বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হান্নান বাবুল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আব্দুল হান্নান, ঠাকুর ধন, রবাই মিয়া, সাজিদ আলী, আলী আহমদ, আছমত আলী, আব্দুস শহিদ, আব্দুস শুকুর, কবির আহমদ, দিলশাদ আলী, আইন উদ্দিন, সেরু জ্জামান, মধু মিয়া, মকবুল আলী, তালেব আলী, নেছার আহমদ, ফরিদ মিয়া, লেকন্দর আলী, আব্দুল জলিল, নূর মিয়া, শফিক আলী, আব্দুল গণি, সেবু সরকার, ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুস শুকুর, আব্দুল হাফিজ, জামাল উদ্দিন, আব্দুল করিম, ইসলাম উদ্দিন, নেপুর আলী, হাসান মো. মিরাশ, শিপন আহমদ, কামাল আহমদ, মোহন মিয়া, ওলিউর রহমান, হিরা মিয়া, মবশ্বির আলী, আক্তার হোসেন, হোসেন আহমদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বিশ্বনাথে ডুবল ‘নৌকা’ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য: ২০টি সেন্টার মধ্যে ১৯টিতে হার
বিশ্বনাথ :: গত ২রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে ৫ হাজার ২১১ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ফারুক আহমদকে (নৌকা ৩ হাজার ২৬৩ ভোট) পরাজিত করে বিরল রেকর্ড গড়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী গরনার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান (জগ ৮ হাজার ৪৭৪ ভোট)। প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
পৌরসভায় থাকা ২০টি ভোট সেন্টারের মধ্যে নৌকার মাঝি ফারুক আহমদের নিজের সেন্টার ছাড়া বাকী ১৯টি সেন্টারেই নৌকা পরাজিত হয়। তাও আবার নৌকার ওই একমাত্র বিজয়ের সেন্টারে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর চেয়ে নৌকা প্রতীকের ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ১৯২ ভোটের। আর পরিজিত হওয়া ১৯টি ভোট সেন্টারের মধ্যে ১৩টি সেন্টারেই আবার ২য় স্থানেও থাকেনি নৌকা। ওই ১৩টি সেন্টারের মধ্যে ৮টি সেন্টার ৩য়, ৪টি সেন্টারে ৪র্থ ও ১টি সেন্টার হয়েছে ৫ম।
সেন্টার কমিটিগুলোর পাশাপাশি উপজেলা-পৌর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোতে থাকা এতো নেতাকর্মীরাই নৌকায় ভোট দিলেই বিশাল ব্যবধানে নৌকা বিজয়ী হতো বলে মনে করেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর তাই বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে নৌকার এমন করুণ ভরাডুবি মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন জুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা সমন্বয়হীতনা ও অন্তকোন্দলের কারণে বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে নৌকা ডুবল বিশাল ব্যবধানে। উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোতে এতোসব বড় বড় নেতাকর্মী থাকার পরও নৌকায় ভোট চাওয়ার ক্ষেত্রে বেশির ভাগই ছিলেন নিষ্ক্রিয়। যার ফলে ভোটের দিন প্রায় সবকটি ভোট সেন্টারে এসব নেতারা ছিলে অনুপস্থিত।
আর যারা নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে কিছু কিছু নেতাকর্মীরা আবার দিনে নৌকা থাকলেও রাতে ছিলেন অন্য প্রার্থীর পক্ষে, কিছু নেতাকর্মীরা আবার নৌকার মাঝির সাথে সাথে থেকেই নৌকা ডুবানোর কাজ করেছেন ভবিষ্যতে নিজের পথ পরিষ্কার করার জন্য, আরেকটি অংশ আবার নিজের মুখে কিংবা স্যোসাল মিডিয়ার লম্বা-লম্বা কথা বলে ও স্ট্যাডার্স দিয়ে নৌকার প্রকৃত সমর্থকদের মনে দিধাদ্বন্দের সৃষ্টি করে নৌকার ব্যাপক ক্ষতিই করেছেন।
বিগত সময়গুলোতে যে বা যারা বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরুধীতা করেছে তাদের একটি বড় অংশ এবার নৌকার পক্ষে সক্রিয় হওয়ায় এবং যারা মন থেকে নৌকার বিজয় চান তাদের বড় অংশটিকেই কৌশলে নৌকার পক্ষের প্রচার-প্রচারণার বাইরে রাখার ফলটি হচ্ছে বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির অন্যতম প্রধান একটি প্রধান কারণ।
নৌকা ভরাডুবির অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে আরেকটি হচ্ছে সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েও নিজেদের কাঙ্খিত উন্নয়ন না পাওয়ায় ও কিছু কিছু বিষয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ায় পৌরসভা সাধারণ ভোটাদের মধ্যে নৌকায় ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার প্রবনতা। প্রতারণা হওয়ার প্রতিবাদ হিসেবে অনেকেই তাই এবার নৌকায় ভোট দেননি।
প্রতীক বরাদ্ধের পর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গঠন করা হয় ১০১ সদস্যের ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’। ওই কমিটি আবার পরবর্তিতে পৌর এলাকায় থাকা ২০টি সেন্টারের জন্য পৃথক ২০টি সেন্টার কমিটিও গঠন করে। কিন্তু কমিটিগুলো গঠনের পর থেকেই কার্যত প্রায় নিস্ক্রিয়ই ছিলো।
অভিযোগ রয়েছে জেলা কমিটি যে ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন করে ছিলেন পরবর্তি সময়ে সেই কমিটিকে বাদ দিয়ে গোপনে আরেকটি কমিটি গঠন ও পৃথক পৃথ সেন্টার কমিটি গঠন করে চলছিলো প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম। ফলে ভোট গ্রহনের পূর্ব থেকেই ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’র কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে রয়েছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।
এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)’র মাধ্যমে একই দিনে (২রা নভেম্বর) বিশ্বনাথ পৌরসভা ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ‘সিসি ক্যামেরা’ থাকা নিয়েও হয়েছে বড় নাটক। বিশ্বনাথের নির্বাচনে ‘সিসি ক্যামেরা’ থাকলেও, ছিলনা ওসমানীনগরে। একই নির্বাচনী আসনে (সংসদ নির্বাচন) সিসি ক্যামেরার দু’রকমের অবস্থা জনমনে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর এতে করে সামনে চলে এসেছে সংসদ নির্বাচনে ‘নৌকা’র দাবিদার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পায়তারার বিষয়টি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীই অভিযোগ করেন, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদগুলোর বেশির ভাগই দখল করে আছেন একলা নেতারা। যাদের নির্বাচনে জনগণের কাছ থেকে ভোট আনার কিংবা নিজের সেন্টারে নৌকাকে বিজয়ী করানোর কোন ক্ষমতাই নেই। আবার কিছু কিছু নেতা নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করেনা নিজের পদটি চলে যেতে পারে বলে, তারা আবার দলের মিছিল মিটিংয়ে একা একা এসে ফটো উঠেই নিজের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করেন, সেই তাদেরই নেতৃত্বে দল থাকলে কিভাবে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে।
প্রত্যেকটি নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে হলে অভিমান করে ঘরে বসে থাকা কিংবা দলের কার্যক্রম থেকে নিজেকে নিস্ক্রিয় করা রাখা ত্যাগী নেতাকর্মীদের আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী গরণার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহিবুর রহমান বলেন বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগের যে অবস্থা, তাতে শুধু নৌকা দিয়ে দিলেই বিজয় নিশ্চিত হবে না। যে কোন নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হলে এখানকার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। একলা নেতাদের বাদ দিয়ে এসব কমিটিতে মূল্যায়ন করতে হবে দলের ত্যাগী কর্মীদের। তবেই নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে।