মঙ্গলবার ● ১৫ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঈশ্বরগঞ্জে ভিজিডির ১২৬ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ
ঈশ্বরগঞ্জে ভিজিডির ১২৬ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রাজিবপুর ইউনিয়নে ভিজিডি কর্মসুচির দুইশত কার্ডের ২১ মাসে প্রায় চার হাজার দুইশত বস্তা (১২৬ টন) চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিট ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এঘটনায় ভোক্তভোগী চার নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজিবপুর ইউনিয়নের ৩১৬ জনের নামে ভিজিডি কার্ড (মাসে ৩০ কেজি চাল) অনুমোদন দেয়া হয়। তন্মধ্যে দুইশত উপকারভোগী কার্ড না পাওয়ায় চাল উত্তোলন করতে পারেনি। পরে বিষয়টি সন্দেহ হলে খোঁজখবর নিয়ে তারা জানতে পারে ২১ মাস ধরে দুইশত উপকারভোগীর চাল কে বা কারা জাল সাক্ষর দিয়ে চাল তুলে নিয়ে গেছে। বিষয়টি চেয়ারম্যান আব্দুল আলী ফকিরকে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো উপকারভোগীদের হুমকি প্রদান করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে উপকারভোগীদের সাথে কথা হলে উপকারভোগী রোকেয়া বেগম বলেন, আমার নামে ভিজিডির কার্ড হয়েছে কিন্তু আমি নিজেই জানি না। কিছুদিন আগে কার্ড হওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে ২২ মাস ধরে আমার সাক্ষর জাল করে চাল কে বা কারা তুলে নিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরে বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে ক’দিন আগে তিনি আমাকে ৩০ কেজি চালের একটি বস্তা দিয়েছেন।
অপর ভোক্তভোগী মজিদা খাতুন বলেন, আনুমানিক দুই বছর আগে মেম্বার আমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ও ছবি নেয়। কিন্তু পরে আমাকে কিছু জানায়নি। কিছুদিন আগে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড করতে গেলে জানতে পারি আমার নামে ভিজিডি কার্ড আছে। পরে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি।
এবিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোতাব্বিরুল ইসলামের কাছে অনিয়মের বিষয়ে জানতে তিনি বলেন, আমার জানামতে আমার সময় কোন অনিয়ম হয়নি। তালিকা প্রনয়নের সময় চেয়ারম্যান মেম্বার আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টির সমন্বয়ে চূড়ান্ত তালিকার পর কার্ড বিতরণ করা হয়। সেই কার্ড অনুযায়ী চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর চেয়ারম্যান সাহেব কিছু কার্ডে নামের অনিয়মের কারণ আটক করেছিল। পরে কি হয়েছে আমার জানা নাই।
এবিষয়ে রাজিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আলী ফকির জানান, অভিযোগের কথাটা পরস্পর শুনছি। সাবেক চেয়ারম্যানের আমলে এসব তালিকা করা হয়েছে। আর সেই তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করা হয়। তখনেই হয়তো একজনের কার্ড আরেক জনে নিয়েছে, কিছু কার্ড বেচা কেনা হইছে, কার্ড তো ঠিক আছে অনিয়ম হইছে বিতরণে। ইদানিং ১০টাকা কেজির চালের তালিকা প্রণয়নকালে কিছু কার্ডধারী পূর্বে সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নজরে আসছে।
ওই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার প্রানেশ চন্দ্র মিত্র বলেন, যতগুলি কার্ড আছে ততগুলি চাল দিয়েছি। আমি উপস্থিত থেকে কার্ড ধারীর হাতে চাল বুঝিয়ে দিয়েছি। যে চাল নিচ্ছে সে প্রকৃত মালিক কিনা তা তো আমি জানিনা। চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব স্বাক্ষর করে তাদের কার্ড দিয়েছে। তারাই বলতে পাবে প্রকৃত মালিক কে।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা বলেন, আমি অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানিনা। যদি অভিযোগ আসে তাহলে ইউএনও সাহেব আছেন উনি হলেন সভাপতি উনার সাথে পরামর্শ করে তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজা জেসমিন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।