শুক্রবার ● ১২ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » গণসংগ্রাম - গণঅভ্যুত্থানের পথে সরকারকে বিদায় নিতে হবে : গণতন্ত্র মঞ্চ
গণসংগ্রাম - গণঅভ্যুত্থানের পথে সরকারকে বিদায় নিতে হবে : গণতন্ত্র মঞ্চ
আজ বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারি নীলনকশার কোন নির্বাচনকালীন সরকার নয়, জনগণের ভোটের অধিকার ও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার ও সরকারি দল যদি জেদ ও অহমিকা পরিহার না করে সময় শেষ হয়ে যাবার আগে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে গণসংগ্রামের পথে তাদেরকে বিদায় নিতে হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর কোন তামাশার নির্বাচনের পাঁয়তারা বরদাস্ত করবেনা।
তারা বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এবার জনগণকে আন্দোলনে জিততে হবে, তা না হলে ভোটের অধিকার, অবাধ নির্বাচন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের সংস্কার - কিছুই অর্জন করা যাবে না। নেতৃবৃন্দ চলমান গণসংগ্রামকে গণঅভ্যুত্থানের পথে নিয়ে যাওয়ার ডাক দেন।
নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এড. হাসনাত কাইয়ূম। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সহ সভাপতি এড. কে এম জাবির, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আনছার আলী দুলাল, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আক্তার, ভাসানী অনুসারী পরিষদ এর সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। গণতন্ত্র মঞ্চ কেবলমাত্র এক সরকারের পরিবর্তে আরেকটা সরকার বসানোর রাজনীতি করে না। তারা জনগণকে শোষণ করার জন্য যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য জনগকে সংগঠিত করার রাজনীতি করে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার শুধু বিদেশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। আর ভুয়া ছবি ছাপাচ্ছে। ভুয়া বলেই দেশে ফিরে জনগণকে জানানোর জন্য কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। গায়ের জোড়ে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে আর দেবে না এই দেশের জনগন। হিল্লি, দিল্লী, জাপান, ওয়াশিংটন, লন্ডন ঘুরে লাভ হবে না৷ আপনাদের মত নির্লজ্জ, স্বৈরাচারের পক্ষে পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী কোন দেশ দাঁড়াবে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে আজকের সমাবেশ শাহবাগ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। আমরা আশা রাখব প্রধানমন্ত্রীও দেশের মানুষের প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে এখনি পদত্যাগ করে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করে দিবেন। আর যদি ১৪, ১৮ এর মত নির্বাচনের পরিকল্পনা যদি আপনাদের থেকে থাকে তাহলে বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে তার ভোটাধিকার আদায় করে নেবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যার রাজত্ব কায়েম করেছেন। সেজন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটা সৌজন্য সাক্ষাৎকে তিনি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বলে প্রচার করেছেন। আপনার উন্নয়নের মডেল আইউব খানের মডেল আর এরশাদের মডেল। আপনার পরিনতি সেজন্যে ঊনসত্তর আর নব্বই এর মডেলে ক্ষমতা থেকে জোর করে টেনে নামানো। আন্দোলন ঠিকঠাক শুরুর আগেই এখন আপোষের আওয়াজ আসছে। সুতরাং এখনই নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের পথ উন্মুক্ত করে দেন।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর সতের বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় নাই। সেজন্য আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ সৃষ্টি করেছি শুধু শাসক পরিবর্তনের জন্য নয় এই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করার অঙ্গীকার নিয়ে। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলোর অঙ্গীকার, দলীয় সরকারের অধীনে আমরা কেউ নির্বাচনে যাব না। আমরা এই শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের আন্দোলন প্রতিটি জেলায় জেলায় নিয়ে যাবো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল - জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন স্বপন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের অধিকার আদায়ের সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে এইরকম আন্দোলন আর হয় নাই। আজকে আমাদের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সময়। এই লড়াইয়ে জনগন রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে মাঠে নেমে এসেছে। কারণ এই সরকারের পতন ছাড়া জনগণের মুক্তি নাই, সেটা তারা বুঝতে পেরেছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল - জেএসডির সহ-সভাপতি কে এম জাবির বলেন, দ্রব্যমূল্য আর দুর্নীতির অত্যাচারে জনগন আজ ফুঁসে উঠেছে এবং রাস্তায় নেমে আসছে। তিনি আন্দোলনকারী দলগুলোকে আন্দোলনের রূপরেখা দেবার দাবি জানান।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, এই সমাবেশ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তীব্র করার সমাবেশ। এই সমাবেশ গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা আদায় করে নেয়ার আন্দোলন সফল করার জন্য শপথ নেয়ার সমাবেশ।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আনসার আলী দুলাল বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ তার মৌলিক অধিকার ফিরে পায় নাই। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে এই মুহুর্তেই আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ করতে হবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য তাসলিমা আক্তার বলেন, এই সরকার জনবিচ্ছিন্ন বলেই মজুরি বৃদ্ধির চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গঠিত বোর্ডে কোন প্রকৃত শ্রমিক প্রতিনিধি রাখার প্রয়োজন বোধ করে নাই। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কারের আন্দোলনে সকল মেহনতি মানুষ সাথে থাকার আহ্বান করেন তিনি।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু বলেন গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করা হয়েছে শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, এই মঞ্চের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার হচ্ছে সরকার পতনের সাথে সাথে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার করা যাতে শেখ হাসিনার মতো কোন অগণতান্ত্রিক সরকার আর ক্ষমতায় না আসতে পারে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন বলেন জনগণের ভোটের হক আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব।