বুধবার ● ২১ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » এগিয়ে যাও বাংলাদেশ » বজ্রপাত সম্পর্কে ধারণা ও করণীয়
বজ্রপাত সম্পর্কে ধারণা ও করণীয়
কার্ত্তিক চন্দ্র রায় :: বজ্রপাত হল আকাশে আলোর ঝলকানী বিশেষ। আলোর এ ঝলকানী হচ্ছে বজ্রপাতের এক ভয়ঙ্কর রুপ। এ সময় বজ্রপাত সংঘটিত এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যার তাপ ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সমপরিমান। ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা যা সূর্যের পাঁচগুণ বেশি। এ সময় বাতাসের প্রসারন এবং সংকোচনের ফলে বিকট শব্দ সৃষ্টি হয়। বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন দুটি মেঘের মধ্যে অথবা একটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও সংঘটিত হতে পারে। বজ্রপাতের সময় সেখানে ডিসি কারেন্ট উৎপন্ন হয়।
আমাদের বাংলাদেশে ঝড় বৃষ্টির মৌসুমে শুরু হয়েছে বজ্রপাত। প্রচন্ড গরমের পর বৃষ্টির পরশ প্রশান্তির পাশাপাশি ডেকে এনেছে বজ্রপাতের তীব্র আতঙ্ক। বজ্রপাতে একাধিক মারা যাচ্ছে অসতর্কতার কারণে। এদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭০ শতাংশই খেটে খাওয়া মানুষ। যারা মাঠে ময়দানে বা জমিতে কাজ করে থাকেন। এছাড়াও রাস্তাঘাটে, পুকুরে গোসল করার সময় এমনকি মাছ ধরার সময়ও বজ্রপাতে মানুষ মারা যায়। ফিনল্যান্ড ভিত্তিক বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণাসংস্থা ভাইসালার তথ্য মতে পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশ মানুষের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতের ফলে মাঠে থাকা গবাদীপশুরও মৃত্যু ঘটে থাকে। সম্মানিত বিশ্লেষকদের মতামত অনুযায়ী শহর এলাকায় বেশিরভাগ ভবনে বজ্রনিরোধক শলাকা থাকায় বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু তেমন একটা হয়না। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলে বজ্রনিরোধক শলাকা না থাকায়, বড় বড় গাছপালা কমে যাওয়ায় খোলা মাঠের কারণে গ্রাম এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও হাওড় এলাকায় আবাদী জমির মধ্যে বড় বড় গাছ না থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশী।
বজ্রপাতের ধর্ম- বজ্রপাত মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে আঘাত হানে। বৃক্ষহীন হাওর এলাকায় কৃষকের শরীর মাটির চেয়ে উঁচুতে থাকে। সেজন্য বজ্রপাতের সময় মাঠে বা খোলা জায়গায় যেখানে উঁচু কোনো গাছ নেই বা বজ্রনিরোধক কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে যারা থাকেন তারাই বজ্রপাতের শিকার হন।
বজ্রপাত সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশ মানুষের ধারণা রয়ে গেছে, ছোটবেলা থেকে আমরা জেনে এসেছি মেঘের সাথে মেঘের ঘর্ষণের কারণে বজ্রপাত হয়। বিষয়টি সঠিক নয়। বেজ্রপাত মূলত: চার্জ বা আধান। বজ্রপাত আসলে আয়নিত জলকণার ফলে ঘটে থাকে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে ১৬৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু বজ্রপাত প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে প্রকল্প থাকলেও বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছেনা। বজ্রপাতের পেছনে একক কোনো কারণ নেই। তবে এ থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতার কথা বলেছে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বজ্রপাতের সময় জরুরী করণীয়
বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
ধানখেত বা খোলা মাঠে থাকলে বজ্রপাতের সময় তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন।
যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মুঠোফোনের টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।
বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তিদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।