সোমবার ● ১০ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহের কাজ পেলেন আ’লীগ নেতার আত্বীয়রা
বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহের কাজ পেলেন আ’লীগ নেতার আত্বীয়রা
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়া জেলা থেকে এবার বোরো মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর মিল মালিকদের কাছ থেকে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি করেছে। ১৮৫ মিল মালিক চুক্তি করেছেন চাল সরবরাহের। ৭ জুন শুরু হয় চাল কেনা কার্যক্রম। প্রতি কেজি চাল ৪৪ টাকা দরে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কিনবে খাদ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সরকারি বিধি না মেনে কুষ্টিয়ায় বোরো সংগ্রহ অভিযানে অতিরিক্ত বরাদ্দের পাঁচ হাজার মেট্রিক টন চাল এক আওয়ামীলীগ নেতা ওমর ফারুক ও তাঁর ভাইয়ের নিয়ন্ত্রিত নয়টি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে একই শর্ত পূরণ করার পরও আরও ১৯ মিল মালিককে এ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
মিলমালিক ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনা হবে এ জেলা থেকে। ১৮৫ মিলমালিকের মধ্যে পাক্ষিক উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী বরাদ্দ করা হয়। যে সব মিলমালিক যথাসময়ে চুক্তি করা সমুদয় চাল সরবরাহ করবেন, তাঁদের অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম আছে। সেই শর্ত পূরণ করে জুন মাসের মধ্যে ২৮ অটো রাইস মিলমালিক অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। তবে ৩ জুলাই খুলনা অফিস থেকে পাঠানো চিঠিতে ৯ মিল মালিকের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার সকাল ১১টার সময় বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১৫ জন নেতা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বেলা দেড়টা পর্যন্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে তাঁদের বাগবিতণ্ডাও হয়। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে রবিবারের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা।
চাল সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে, সেগুলো হলো সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুকের মালিকানাধীন ফ্রেশ অ্যাগ্রো লিমিটেড, ওয়াদি অটো রাইস মিল, ওমর ফারুকের ভাই হযরত আলীর প্রতিষ্ঠান প্রগতি অটো রাইস মিল, ওমরের আরেক ভাই জামসের আলীর প্রতিষ্ঠান শামীম অ্যাগ্রো ফুড, আরেক ভাই মজিবর রহমানের মালিকানাধীন প্রভাতী অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস এবং তাঁদের আত্বীয় ও ব্যবসায়িক সহযোগী সুবর্ণা অটো ফুড-১, মা ভান্ডারি অটো রাইস মিল, গুরুর দান অ্যাগ্রো ফুড ও তানিয়া অটো রাইস মিল। সবচেয়ে বেশী বরাদ্দের ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে ওমর ফারুকের দুটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ১ হাজার ১৬ মেট্রিক টন এবং তাঁর অন্য তিন ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ২ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। আর বাকি চাল সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে তাঁদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো। বঞ্চিত মিলারদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক প্রভাব খাটিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাদের ‘কমিশন দিয়ে ম্যানেজ করে’ তাঁদের নয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ করিয়েছেন।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, সাধারণ মিলমালিকেরা খুবই ক্ষুব্ধ। অতীতেও এমন হয়েছিল তখন জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়েছিল। এবার মাত্র নয়জন পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে চার ভাইয়ের পাঁচটি মিল। বাকি চারটিও তাঁদের অনুসারী। মিল মালিক লিয়াকত আলী বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অন্যায়ভাবে পাঁচ হাজার টনের বেশি চাল নয়জনকে দেওয়া হয়েছে। আমরা শর্ত পূরণ করে আবেদন করেও চাল পাইনি। অসৎ উদ্দেশ্যে খাদ্যে বিভাগের লোকজন এ কাজ করেছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মিল মালিক ওমর ফারুক বলেন, আবেদন করার পর আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে এখনো কোনো অনিয়ম হয়নি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলেন, ২৮ মিল মালিক আমার কাছে বিভিন্ন সময় আবেদন করেছিলেন। প্রত্যেকের আবেদন আমি খুলনায় আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। এগুলোর মধ্য থেকে মাত্র নয়জনকে বরাদ্দ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এ নিয়ে অন্য সকল মিল মালিকেরা আমার কাছে এসেছিল।
কুষ্টিয়ায় রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিলেন বিএনপি নেতা বাবলু
কুষ্টিয়া :: কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট বাজার সংলগ্ন চলমান রাস্তার কাজ বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ বাবলুর বিরুদ্ধে। জিকে ক্যানেলের সরকারি জমি মালিকানাধীন জমি দাবি করে সরকারি এই কাজ বন্ধ করার অভিযোগে ওই নেতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে রাস্তার কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মফিজের বাড়ি থেকে কবুরহাট হাই স্কুল ভায়া মন্ডলপাড়া কবুরহাট বাজার সড়কটি “জিকেআর আইডিপি” প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছে এলজিইডি কুষ্টিয়া সদর। ২৫০৭৯৫৩৫৬ নং রোড আইডি’র চে: ৫০০-১০০০মি: রাস্তার কাজটি চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। এদিকে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করে জনগণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে গত রোববার (৯ জুলাই) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় এলাকাবাসীরা।
মানববন্ধনে এলাকাবাসীরা বলেন, কুষ্টিয়া সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ভাই এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে পাকা রাস্তাটি নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বার বার এখানে এসে সকল ধাপ অনুসরন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজের শেষ দিকে এসে রাস্তার একটি অংশ নিজ মালিকানাধীন জমি দাবি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বিএনপির সাবেক এক প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু। মাননীয় এমপি মহোদয়ের উদ্বোধন করা রাস্তার কাজ বন্ধ করে বাবলু চেয়ারম্যান নোংরা রাজনীতির পরিচয় দিয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধি এরকম জনদুর্ভোগ তৈরি করতে পারে এটা না ঘটলে বিশ্বাস হতো না। মানববন্ধন থেকে এলাকাবাসীরা রাস্তাটির কাজ সমাপ্ত করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে মাননীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এই বিষয়ে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (মিন্টু ফকির) বলেন, রাস্তাটি আসলে জিকের জায়গায় হচ্ছে। জিকের অধিগ্রহণ করার কাগজ পত্র আছে। দুর্ভাগ্যবশত জিকের নামে জমিটা রেকর্ড হয়নি। ২০০৩ সালে এই রাস্তার জমির পাশে জমি কেনেন বাবলু চেয়ারম্যান। তারপর থেকে জিকের জমি নিজের বলে দাবি করেন তিনি। আমরা সার্ভেয়ার এনে মেপে দেখেছি যে, তিনি উল্টো জিকের জমির ভিতরে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু সেটা তিনি মানতে নারাজ। এমতাবস্থায় তিনি আদালতে গিয়ে আমাকে ও এলজিইডি’র ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে বিবাদী করে একটি মামলা করেছেন। সেই সাথে এই জমির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। রবিবার এই বিষয়ে আদালতে শুনানি হয়েছে এবং সোমবার আদালত রায় দেবেন। আশা করছি আগামী মঙ্গলবার থেকে পুনরায় আমরা রাস্তার কাজ শুরু করতে পারবো।