সোমবার ● ১২ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের জন্য মালিক, সরকার, ফায়ার সার্ভিস, কল-কারখানা পরিদর্শক-কে দায়ী করলেন বাম জোট নেতৃবৃন্দ
অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের জন্য মালিক, সরকার, ফায়ার সার্ভিস, কল-কারখানা পরিদর্শক-কে দায়ী করলেন বাম জোট নেতৃবৃন্দ
ঢাকা :: বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল আজ ১২ জুলাই ২০২১ সোমবার সকাল ১১টায় রূপগঞ্জে কর্ণঘোপে হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজ তথা সেজান জুস কারখানা সরজমিন পরিদর্শ করেন। বাম জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য কমরেড মানস নন্দী, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড বাচ্চু ভুইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কমরেড শহীদুল ইসলাম সবুজ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি কমরেড হামিদুল হক ও বাসদ এর কেন্দ্রীয় পাঠচক্রের সদস্য কমরেড আহসান হাবিব বুলবুল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সাথে আরও যুক্ত হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ জেলা সমন্বয়ক কমরেড নিখিল দাস, সিপিবি নেতা মন্টু ঘোষ, শিবনাথ চক্রবর্ত্তী, বিমল কান্তি দাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আবু হাসান টিপু, রাশিদা বেগম, গণসংহতি আন্দোলনের তরিকুল সুজন, জেলা শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা সেলিম মাহমুদ ও রূপগঞ্জের স্থানীয় বাসদ নেতা মো. সোহেল।
পরিদর্শনকালে নেতৃবৃন্দ কারখানার বিভিন্ন তলা ঘুরে ঘুরে দেখেন। সেখানে কারখানার শ্রমিক ও নিহত-আহত শ্রমিকদের স্বজনরা বলেন, ৩৪ হাজার বর্গফুটের প্রতি ফ্লোরের গেট অগ্নিকান্ডের সময় তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল যা শ্রম আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। নেতৃবৃন্দ দেখেন কারখানার নীচ তলায় অ্যালোমিনিয়াম ফয়েল, কেমিক্যালসহ দাহ্য পদার্থের গোডাউন যা কারখানা আইনের পরিপন্থি। ৩৪ হাজার বর্গফুটের ৬ তলা কারখানায় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী কমপক্ষে ৪টি সিড়ি এবং বাহির হওয়ার সিড়ি বাইরের দিক থাকা প্রয়োজন যা ছিল না, সেখানে ২টি সিড়ি ভেতর দিকে ছিল যার একটি বন্ধ ছিল অন্যটিতে কোন বৈদ্যুতিক বাতি ছিল না, সেখানে সিড়ি ছিল অন্ধকার ও অপ্রশস্ত, শ্রমিকদের মোবাইলে লাইট জে¦লে উঠানামা করতে হতো। নেতৃবৃন্দ সেখানে ৪র্থ তলায় এখনও আগুনের ধুয়া উড়তে এবং ৫ তলায় আগুন জ¦লতে দেখতে পান। ৪র্থ তলায় একটি কালো ভষ্মিভূত স্তুপের মধ্য থেকে কয়েকটি হাড় তুলে একজন শ্রমিকের স্বজন চিৎকার করে বলে উঠেন এটি তার মৃত মেয়ের হাড়। তার মেয়ে ঐ ফ্লোরে কাজ করতো। এ ঘটনায় নেতৃবৃন্দ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ৫ দিন পরে গিয়েও যেখানে মানুষের হাড়গোড় পাওয়া যায় তখন ২ দিন আগেই ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল কিভাবে ঘোষণা করতে পারেন সেখানে আর কোন মৃতদেহ নাই?
পরিদর্শন শেষে করাখানা গেটে নিহত-আহত শ্রমিকদের স্বজন, স্থানীয় জনসাধারণদের এক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সেজান জুস এর অগ্নিকান্ডে শ্রমিকের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা নিছক কোন দুর্ঘটনা নয়, এটি মালিক, সরকার প্রশাসনের অবহেলা, গাফিলতিজনিত ও কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। একটি কারখানা করতে হলে ২৩ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুমতি লাগে অথচ সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে, শ্রম আইন-শিল্প আইন লংঘন করে দিব্যি কারখানা চালিয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে এই ঘটনার দায় কোন মতেই সরকারী বিভিন্ন দপ্তর ও সরকার এড়াতে পারে না। ১২/১৪ বছরের শতাধিক শিশুদের দিয়ে ঐ কারখানায় কাজ করানো হতো যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ। অগ্নি নির্বাপনের জন্য কোন যন্ত্র এবং ফোম ছিল না। ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টকেই-এ দায় নিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরাকরি তদারককারী সংস্থা দায়িত্ব পালন না করায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া তাজরীন, রানা প্লাজা, টাম্পাকো কারখানায় অগ্নি সংযোগ ও ভবন ধসের ঘটনায় মালিক-সরকার প্রশাসনের কারো বিচার ও শাস্তি না হওয়ায়ই একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। স্থানীয় জনগণ নেতৃবৃন্দকে জানান ব্যাংক ঋণের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মালিক পক্ষ থেকেই আগুন লাগানো হতে পারে বলে তারা ধারনা করছেন।
পরিদর্শন শেষে নেতৃবৃন্দ নিন্মোক্ত দাবি জানান (১) সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন আয়ের সমান অর্থাৎ ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের উন্নত চিকিৎসা-পুনর্বাসন-ক্ষতিপূরণ এবং নিহত-আহত-নিখোজ শ্রমিকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। (২) নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে অগ্নিকান্ডের কারণ, অনিয়মসহ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা (৩) মালিক হাসেমসহ ঘটনার জন্য দায়ী কল কারখানা পরিদর্শক, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ পরিদর্শনের আরও বিস্তারিত রিপোর্ট দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা ও দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার জন্য আগামী ১৪ জুলাই ২০২১ সকাল সাড়ে ১১টায় সিপিবি অফিসের ৫ম তলায় মৈত্রী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেন।