রবিবার ● ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » পার্বত্যঞ্চলে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের মূলহোতা আতো মার্মা রুমায় সেনা কর্মকর্তা নিহতের পর ভারতে পলায়ন
পার্বত্যঞ্চলে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের মূলহোতা আতো মার্মা রুমায় সেনা কর্মকর্তা নিহতের পর ভারতে পলায়ন
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: পার্বত্য চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত অনেক স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী দল বা উপদলের নাম শুনা যায়। তাদের কাছে অস্ত্র, গুলি, সামরিক সরঞ্জাম কোথা থেকে আসে বা কারা সরবরাহ করেন ? মাঝে মধ্যে কিছু সন্ত্রাসী আইন শৃংখলা বাহিনী কাছে ধরা পড়লেও অস্ত্র, গোলা বারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীরা থাকে লোকচক্ষুর আড়ালে, সেই সকল ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার খবর খুবই কম।
২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বছর ধরে অনুসন্ধান করে বেশ কিছু নাম পাওয়া গেছে। তাদের মূলহোতা অন্যমত হচ্ছে আতো মারমা প্রকাশ মং, সাচিং মগ, আতু মার্মাসহ তার একাধিক নামে পরিচিত সে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৪৬১৬১৪৭৩৪০৫৯৭, মোতাবেক তার আসল নাম আতো মার্মা (৩২), পিতা- অংসা মারমা, মাতা-আপাই মারমা, স্থায়ী ঠিকানা- পূর্ব চাইল্যাতলী, ডাকঘর- লক্ষীছড়ি-৪৪৭০, থানা- লক্ষীছড়ি, উপজেলা- লক্ষীছড়ি, জেলা- খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। এ আন্ডরগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী এ পর্যন্ত যে সকল মোবাইল সিম ব্যবহার করে তা মধ্যে কয়েকটি ০১৮৬৬২০৮৮৪২/ ০১৫৫৪৭৭৬২৮১/ ০১৮৮৭৭৮৪৮৪২/ এসব নাম্বারে তার হোয়াটএ্যাপস, ইমু দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দেশের বাইরে যোগাযোগ করার তথ্য রয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেইজবুকে তার “পাহাড়ি ছেলে” ও “সাচিং” নামে একাধিক ফেক আইডি চলমান।
আতো মার্মার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা আপাই মারমা তার ছোট ছেলে, ছোট মেয়ে এবং মেয়ের জামাই সিএনজি চালক তারা ৩জন অতি সাধারন জীবন যাপন করছেন।
আপাই মারমার নিকট তার বড় ছেলে আতো মার্মার বিষয়ে জানতে চাই তিনি রেগে যান, কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আপাই মারমা বলেন, তার ছেলে এলাকায় বা বাড়িতে আসতে পারেনা। কেন আসতে পারেনা ? জানতে চাইলে, আতো মার্মার মা বলেন, তার ছেলে অনেক কারাপ কাজের সাথে জড়িত। এলাকার মানুষ তাকে ফেলে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে (তাকে হত্যা করা হবে)। আতো মার্মা বিগত ৪ বছরে কতবার তাদের দেখতে বাড়িতে এসেছে ? জানতে চাইলে আপাই মারমা বলেন, মাত্র ২ বার। এখন কোন যোগযোগ তাদের সাথে আতো মার্মার আছে কি-না ? তার মা আপাই মারমা জানান মাঝে মধ্যে অনেক বেশী রাত্রি করে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলে, তার ভাই, বোন ও বোনের জামাই তারা আতোর সাথে কথা বলেনা। কোন পরিবারের অন্য সদস্যরা আতোর সাথে কথা বলেনা ? জানতে চাইলে প্রতিত্তোরে বলেন, মেযের জামাই, ছেলে- মেয়ে এরা সব সময়ে বলে আতো না-কি মানুষ মারার কাজ করে, বৌদ্ধ ধর্মে এটা মহা পাপ, তাই তারা কেউ যোগাযোগ রাখতে রাজি নয়।
আতো মার্মা ইয়াবা, তক্ষক, পুরাতন পয়সা, বৌদ্ধমুর্তি ও পুরোকর্তী এসব ব্যবসার সাথে যুক্ত এসবে আড়ালে তার মূলতঃ ব্যবসা হচ্ছে, পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র, গুলি, সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা, সে এবং তাঁর সিন্ডিকেট সদস্যরা পার্বত্যঞ্চলে নাশকতামূলক কার্মকান্ডের সরাসরী জড়িত এছাড়া ইয়াবা, তক্ষক, পুরাতন পয়সা, বৌদ্ধমুর্তি ও পুরোকর্তী এসব সমতলে সিন্ডিকেটের কাছে পৌছানো। বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারনার মামলা রয়েছে।
এদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চায়নিজ এসএমজি, একে-২২, একে-৪৭ রাইফেলসহ অত্যাধনিক অস্ত্র-শস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং তাদের আওতায় পার্বত্যঞ্চলে স্থানীয়ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর কারখানা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আতো মার্মার বাংলাদেশে এবং ভারতে বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। সে ভারতীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজশাহী সোনা মসজিদ, যশোহর বেনাপোল, মায়মারের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, কক্সবাজারের টেকনাফ, রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বরকল সিমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র, গুলি, সামরিক সরঞ্জাম এনে সরবররাহের করে থাকে বলে জানা গেছে।
আতো মার্মা বিগত ৪ বছরে খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি শহরের মিলনপুর, রামগড়, তবলছড়ি,পানছড়ি, দুদুকছড়া, দিঘীনালা, মেরুং, মহালছড়ি, মাইসছড়ি, রাঙামাটি জেলার বেতছড়ি, নানিয়ারচর, রাঙামাটি শহরে চক্রপাড়া, হাসপাতাল এলাকা, আসামবস্তী, বিহারপুর, ভেদ ভেদী পাড়ার মোনতলা (যুব উন্নয়ন এলাকা), শিমুলতলী, রাজমনি পাড়া, কাপ্তাই, লিচুবাগান, বাঙ্গালহালিয়া, বিলাইছড়ি, বরকল, বান্দরবানের থানচি, রুমা, এ্যাম্পুপাড়া, বড়মদক, তলীপাড়া, বালাঘাটা, নাইক্ষ্যংছড়ি, কালাঘাটা, ডুলাহাজারা, ঢাকার গুলশান ও চট্টগ্রামে হালিশহরে তার যাতায়ত ছিলো এবং পার্বত্য অঞ্চলের ২৬ উপজেলায় কম-বেশী তার সিন্ডিকেট রয়েছে।
তার এ সিন্ডিকেটে মারমা, চাকমা, পাংকুয়া, ম্রো, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালী সদস্য আছে।
রাঙামাটিতে আতো মার্মা যাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে থাকে তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক ও বর্তমান উপজেলা এবং ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছে।
আতো মার্মা বিগত ৬ মাস যাবৎ বান্দরবানের বালাঘাটায় বসবাস করে আসছিলো। বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে ১ সেনা কর্মকর্তা ও ৩ সন্ত্রাসী নিহত হয়। রুমা সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বথি পাড়ায় গত ২ ফেব্রুয়ারী রাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে অস্ত্রধারীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে ঘটানাস্থল রুমা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দুরত্বে পূর্ব - উত্তরে রুমা সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বথি পাড়া (যিশুরাম পাড়া)’ র এতে দুই পক্ষের চারজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। এতে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান নিহত হয়। এঘটনার পর (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল বেলায় বান্দরবানের বালাঘাটা থেকে আতো মার্মা ভুয়া নাম্বারযুক্ত কালো রংয়ের ১১০ সিসি হোন্ডা মোটরসাইকেল যোগে খাগড়াছড়ি সিমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সর্বশেষ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে যে কোন দিন যে কোন সময়ে ভারত থেকে কক্সবাজার অথবা বান্দরবান ফেরত আসার বিষয়ে সিন্ডিকেটের সূত্র জানিয়েছেন।