মঙ্গলবার ● ৩০ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজের একই ব্যাক্তি চাকুরী করেন দুই প্রতিষ্টানে
কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজের একই ব্যাক্তি চাকুরী করেন দুই প্রতিষ্টানে
কাউখালী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি :: রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজের এক শিক্ষক দুই প্রতিষ্টানে দীর্ঘদিন যাবত চাকুরী করার গোপন তথ্য ফাসঁ হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া যায়।
সুত্র জানায়, কাউখালী সরকারী ডিগ্রি কলেজটি ১৯৯৯ সালে উপজেলা সদর হতে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে কচুঁখালী গ্রামে ১ একর ভুমির উপর স্থাপিত করা হয়। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা। ভুমিদাতা ছিলেন তার মাতা স্নেহময়ী রোয়াজা। সেই সময় কলেজটি ছিল বে-সরকারী। বে-সরকারী নিয়ম অনুযায়ী অধ্যক্ষ হতে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক/ শিক্ষিকা সহ সকল কলেজ স্টাফ তৎকালীন সময়ে কলেজ গভর্নিং নিযোগ প্রদান করেন। ২০১২ সালে কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক/প্রভাষক পদে ১জন শিক্ষক/প্রভাষক গভর্নিং বডি নিয়োগ প্রদান করেন। কলেজ যথাযথ নিয়ম কানুন মেনেই চলে আসছিল। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজটি সরকারীকরন ঘোষনা করা হয়। সরকারীকরন ঘোষনা হওয়ার পর থেকে কলেজ সরকারী নিয়ম কানুন অনুসারে চললেও বিপত্তি বাজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কলেজের সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা অফিস স্টাফদের সাথে। তারই ধারাবাহিকতায় কলেজের সকল শিক্ষক/শিক্ষিকারা একত্রিত হয়ে তাদের পক্ষে সহকারী অধ্যাপক ব্যাবস্থাপনা (শিক্ষক) মো.এজাহার মিয়া বাদি হয়ে গত ২৯ মার্চ/২০২২ তারিখে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছাহাকের বিরুদ্বে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই বিষয়গুলি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এবং বিষয়টি কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা কৃষি অফিসার কে আহবায়ক বানিয়ে ৩ সদস্য বিশিস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন বলে জানা যায়।
অপরদিকে গত ১১আগস্ট/২০২২ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম অন্চলের পরিচালক প্রফেসার কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজ পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনকালীন সময়ে শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের সাথে মতবিনিময়কালে কলেজে শিক্ষকদের মাঝ থেকে প্রশ্ন ? আসে একজন শিক্ষক কি করে দুই প্রতিষ্টানে চাকুরী করেন ? তখনি এই গোপন বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে! বিষয়টি ত?ক্ষনাত পরিচালক মহোদয় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি উপস্থিত সকলের সামনে স্বিকার করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছাহাক বলেন, ২০১২ সালে ত?কালীন অধ্যক্ষ মো. আব্দুল কাদের সাহেবের আমলে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক/প্রভাষক পদে বিপুল ভট্টাচার্য (১০/১০/২০১২ সালে) নামক ব্যাক্তিকে নিযোগ প্রদান করেন যার এনটিআরসিএ রোল নং ৪০৫০২৫২৫, ব্যাচ ৭তম,পাশের সাল ২০১১। তিনি তখন থেকে কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজে (তখন বে-সরকারী ছিল) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক/ প্রভাষক পদে আছেন এবং তিনি সপ্তাহে শনিবার ১ দিন করে ক্লাস করান এবং সপ্তাহের পুরো ৬ দিনের স্বাক্ষর হাজিরা খাতায় একদিনে করে দেন শুধু তিনি নন কলেজের সকল শিক্ষক/শিক্ষিকারা সকলে কলেজে ৩দিন এসে ৬দিনের স্বাক্ষর হাজিরা খাতায় করেন। সেই সাথে তিনি ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার রামু ক্যান্টনমেন্ট শাখা ট্রাষ্ট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে চাকুরী করে আসছেন। কিন্তু কলেজ হতে বে-সরকারীভাবে মাসিক যে ১০ হাজার টাকা করে সর্ম্মানী সেটা নেন না বলে তিনি জানান। বিষয়টি নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ভিষণ হট্টগোলের সৃস্টি হয়। পরিচালক মহোদয় বিষয়টি শুনে হতভম্ব হয়ে যান। পরিচালক প্রভাষক বিপুল ভট্টাচার্য কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি এর সত্যতা স্বিকার করেন।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কলেজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং অফিস স্টাফ সহ উপস্থিত সকলের একটাই প্রশ্ন ? জাগে তা হলে একজন ব্যাক্তি সরকারী প্রতিষ্টানে কর্মরত থাকার পাশাপাশি আরেকটি বে-সরকারী প্রতিষ্টানে ২০১২ সাল থেকে কি করে চাকুরী করে আসছেন ? তাহলে বিপুল ভট্টাচার্য ২০১৮ সালে কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজ সরকারী করন করা হয় সেই থেকে শিক্ষক বিপুল ভট্টার্চায কি? সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সরকারী সকল এরিয়ার বিল ২০২২ পর্যন্ত নিবেন না। যার এরিয়ার বিল আনুমানিক প্রায় ১৮-২০ লক্ষ টাকার মতো গিয়ে দাড়াবে বলে উপস্থিত সকলে এক বাক্যে জানান। তাহলে কি কারনে এই গোপনীয়তা খেলা খেললেন বিপুল ভট্টাচার্য এবং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছাহাক এটা সকলের প্রশ্ন ? বিষয়টি নিয়ে এই প্রতিবেদক কে বিপুল ভট্টাচার্য বলেন, আমি কলেজে চাকুরী করি নামের জন্য কিন্তু আমি তো একটা বে-সরকারী ব্যাংকে চাকুরী করি কিন্তু আমি তো কলেজ হতে মাসিক ১০ হাজার টাকা সর্ম্মানী নিচ্ছিনা। তাকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে একজন ব্যাক্তি সরকারী এবং বে-সরকারী দুই প্রতিষ্টানে এক সংগে চাকুরী করতে পারেন কিনা ? তথন তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান কোন কথা বলেন নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কলেজের প্রতিষ্টাতা সভাপতি ও সাবেক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা তিনি বলেন এক সময় কলেজ বে-সরকারী ছিল এখন কলেজ সরকারীকরন হয়েছে সম্পুর্ন সরকারী নিয়ম কানুন মেনেই চলবে তাহলে এই বিষয়টি গোপন রেখে অধ্যক্ষ সাহেব কি কারনে কেন এই গোপনীয়তা বজায় রাখলেন কার স্বার্থে এটাই দেখার বিষয়। তা ছাড়া আমি বিষয়টি জানতে পেরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ট্রাষ্ট ব্যাংক রামু শাখার ব্যাবস্থাপক লিটন কান্তি নাথের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। তিনি আমার কাছে বিপুল ভট্টাচার্য যে সেই ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে ২০১২ সাল থেকে চাকুরী করে আসছেন তা অকপটে স্বিকার করেন বলে তিনি জানান। কলেজ সরকারী হওয়ার পর আমি আর কলেজের গভর্নিং বডির কমিটির সভাপতি পদে নেই। ইউএনও বর্তমানে সভাপতি বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে কথা বলেন কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজের সভাপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তিনি বলেন আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। আর এ ব্যাপারে কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ সাহেব আমাকে কিছুই জানাননি। তাছাড়া একজন ব্যাক্তি একটি সরকারী প্রতিষ্টানে অন্যদিকে আরেকটি বে-সরকারী প্রতিষ্টানে কি করে চাকুরী করে তা তো সম্পুর্ন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন আমি যেহুতু বিষয়টি জেনেছি বিষয়টি আমি অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করবো বলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান।
এ ব্যাপারে কাউখালীর সচেতন মহল এবং কলেজের সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা/স্টাফ এবং অভিভাবকদের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একজন ব্যাক্তি কি করে এত বছর যাবত দুই প্রতিষ্টানে চাকুরী করে আসছেন তার খুটির জোর কোথায় ? কেনইবা সে দুই প্রতিষ্টানে চাকুরী করবেন। তাহলে এটা কি সরকারী আইন কে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শণ নয় ? সচেতন মহল এর সুষ্ঠ আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের উর্দ্ধোতন মহলের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।